আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পোনা মাছের পাইকারি বাজার করোনা ভাইরাসের কারনে ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। এই পেশার সাথে জড়িত শত শত পরিবার বর্তমানে মানবেতরন জীবন যাপন করছেন। এখন পর্যন্ত তারা সরকারী কোন সহযোগীতা পাননি। স্থানীয় ও সরেজমিন সূত্রে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলায় দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পোনা মাছের পাইকারি বাজার বসে গৈলা ইউনিয়নের দাসের হাটে। সেখানে বরিশাল, যশোর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রতিদিন শত শত পাইকাররা পোনা মাছ কিনতে আসছে। এছাড়া আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলার প্রায় ৪শতাধিক পরিবার এই বাজার থেকে পোনা মাছ ক্রয় করে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। লকডাউনের পূর্বে প্রতিদিন এই বাজারে প্রায় ১০-১২লক্ষ টাকার পোনা মাছ বিক্রি হত। লকডাউনের কারনে এখন প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ৩০হাজার টাকা। আর ওই চার শতাধিক পরিবার লকডাউনের কারনে মাছের পোনা ক্রয় করে গ্রামে গিয়ে বিক্রি করতে না পারায় তারা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই পোনা মাছের বাজারে রুই, কাতলা, মৃগেল, মনোসেক্স তেলাপিয়া, নাইলোনটিকা, কারফু, পাংগাস, চায়নাপুঠি, টাটকিনাসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ প্রজাতির বিভিন্ন জাতের পোনা মাছ বিক্রি হত। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় পোনা মাছের চাহিদা। উপজেলার মৎস ফার্মের মালিক মামুন বেপারী ও ক্রেতা সুমন সরদার এর সাথে কথা বলে জানা যায়, এই বাজারটিতে কয়েক বছর ধরে পোনা মাছ বিক্রি হয়ে আসছি। কিন্তু বর্তমানে এ বাজারে পোনা মাছ বিক্রির সুনাম দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। কিন্তু এই লকডাউনের কারনে যানবাহন না চলায় পোনা মাছ ক্রয় ও বিক্রয় করতে আসছে না কেউ। এতে শত শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। গৈলা ইউনিয়নের দাসেরহাট পোনা মাছ বিক্রির সাথে জড়িত ব্যবসায়ী মনির সরদার, মামুন বেপারী, কবির বেপারী, মিন্টু সরদার, মজিবর সরদারসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারনে লকডাউনে যান চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় দূরের স্থানগুলোতে খামারিদের মধ্যে মাছের খাবার, মৎস্যজাত দ্রব্য ও পোনা মাছ সরবরাহে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে মৎস্য উৎপাদন। আবার করোনার কারনে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বাজারে কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে মাছ। তার ওপর মাছের খাবারের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। এতে উৎপাদন খরচ বহুগুণ বেড়েছে। এই উপজেলার একটি বড় অংশ এখন মাছ চাষ এবং পোনা মাছ বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা লকডাউনের কারনে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সরকারের কাছে প্রনোদনা দাবী করেছেন। দাসেরহাট মৎস্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরদার মনোয়ার হোসেন জানান, এই এলাকার শতশত মৎস্য চাষি বিভিন্ন নালা, ডোবা, পুকুরে পোনা মাছের আবাদ করে স্বাবলম্বি হয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে লকডাউনে এই ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। দাসেরহাটে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মাছ ক্রয়ের জন্য ট্রাক, মিনিট্রাক, নসিমন, ভ্যান যোগে মাছের পোনা ক্রয় করে বিভিন্ন এলাকার হাট বাজার ও গ্রামাঞ্চলে বিক্রি করতো মৎস ব্যবসায়ীরা। দাসের হাট বাজার থেকে স্বল্পমূল্যে পোনা মাছ ক্রয় করে অন্য বাজারে নিয়ে আবার অধিক মূল্যে বিক্রি করে তারা লাভবান হতো অনেক বিক্রেতারা। স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান হওয়ায় মানুষ অন্য পেশা ছেড়ে এই পেশায় ঝুঁকে পড়েছে। এব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, মহামারি করোনা ভাইরাস এবং সরকারের নির্দেশিত লকডাউনের কারণে এদিকে যেমন মাছ চাষি, হ্যাচারি মালিকসহ মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে মৎস্য খাত। মাছ ও পোনা বিক্রয় বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এবং মূলধন ঘাটতির কারণে তারা যাতে প্রনোদনা পেতে পারে সে ব্যাপারে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
Leave a Reply